ভারতের ওড়িশার বালাসোরে যাত্রীবাহী ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২৩৩। এ ঘটনায় আহত আছেন অন্তত ৯০০ জন। শুক্রবার সন্ধ্যায় ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী নবীন পাটনায়েক।
নির্ধারিত সময়েই হাওড়ার শালিমার স্টেশন থেকে চেন্নাইয়ের উদ্দেশে রওনা দেয় আপ করমণ্ডল এক্সপ্রেস। বাংলা থেকে দক্ষিণ ভারত যাওয়ার জনপ্রিয়তম ট্রেনগুলির মধ্যে অন্যতম করমণ্ডল এক্সপ্রেস। বহু মানুষ প্রতিদিন ওই ট্রেনে চড়ে দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন জায়গায় যান চিকিৎসা করাতে।
সন্ধ্যা ৭টার দিকে ওড়িশার বালেশ্বর স্টেশন পেরনোর পর আচমকাই বিকট শব্দে গতি কমতে থাকে করমণ্ডলের। একাধিক বগি ডান দিকে হেলে পড়তে থাকে বিপজ্জনকভাবে।
ট্রেনে উপস্থিত যাত্রীদের কয়েকজন জানান, গতি কমার সঙ্গে সঙ্গে হেলে যাওয়া টের পেতেই হুড়োহুড়ি শুরু বগির মধ্যে। প্রায় এক কিলোমিটার পথ এ ভাবেই আস্তে আস্তে এগোতে থাকে ট্রেনটি। এক পর্যায়ে ডাউন লাইনের ওপর আড়াআড়ি গিয়ে পড়ে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের কয়েকটি বগি।
বলা হচ্ছে, একটি মালগাড়ি করমণ্ডল এক্সপ্রেসের সামনে চলছিল। কোনও ভাবে করমণ্ডল এক্সপ্রেস সোজা গিয়ে ধাক্কা মারে সেই মালগাড়ির পেছনে। মালগাড়ির পিছনে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ধাক্কা এতোই জোরে ছিল যে এক্সপ্রেসের ইঞ্জিন মালগাড়ির বগির উপরে উঠে যায়। পেছনে লাইনচ্যুত হয়ে পড়ে এক্সপ্রেস ট্রেনটির বেশির ভাগ বগি।
সেই সময়ই উল্টো দিক থেকে আসছিল বেঙ্গালুরু থেকে হাওড়াগামী একটি এক্সপ্রেস ট্রেন। লাইনের উপর আড়াআড়ি ভাবে পড়ে থাকা করমণ্ডল এক্সপ্রেসের কয়েকটি কামরার উপর দিয়ে চলে যায় এটি।
ডাউন লাইনে পড়ে থাকা করমণ্ডলের বগির সঙ্গে সংঘর্ষে লাইনচ্যুত হয়ে যায় হাওড়াগামী এক্সপ্রেস ট্রেনের একাধিক বগি। এ সময় ছিটকে পড়েন ট্রেনের ভেতরে থাকা যাত্রীরা।
দুর্ঘটনার অন্য একটি ব্যাখ্যাও পাওয়া যাচ্ছে। রেল কর্মীদের একটি অংশের দাবি, প্রথমে লাইনচ্যুত হয় বেঙ্গালুরু থেকে হাওড়াগামী এক্সপ্রেস ট্রেনটি। হাওড়াগামী ট্রেনের কয়েকটি বগি আপ লাইনে এসে আড়াআড়ি ভাবে পড়ে।
সেই সময় আপ লাইনে ছুটে আসছিল করমণ্ডল এক্সপ্রেস। হাওড়াগামী ট্রেনের লাইনচ্যুত হয়ে যাওয়া বগির সঙ্গে সংঘর্ষ হয় দ্রুতগতিতে ছুটে আসা করমণ্ডল এক্সপ্রেসের। এতে করমণ্ডল এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হয়ে অন্য পাশের লাইনে (থার্ড লাইন) দাঁড়িয়ে থাকা মালগাড়িতে ধাক্কা মারে। ফলে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ইঞ্জিন মালগাড়ির উপরে উঠে যায়।
দুর্ঘটনার জেরে ট্রেনের যাত্রীদের মধ্যে একটি অংশ আটকে পড়েন ছিটকে পড়া বগির মধ্যেই। প্রাথমিক ভাবে ট্রেনের যাত্রীরাই শুরু করেন উদ্ধারকাজ।
সূত্র: আনন্দবাজার অনলাইন