কদিনের সফর এসে বিভিন্ন কর্মসূচি শেষ করে সাতক্ষীরার শ্যামনগর ছেড়েছেন ডেনমার্কের রাজকুমারী ম্যারি এলিজাবেথ ডোনাল্ডসন। এর আগে বুধবার (২৭ এপ্রিল) সকাল ১০টা ১২ মিনিটের দিকে মুন্সিগঞ্জ এলাকার ধানখালীতে নির্মিত হ্যালিপ্যাডে বিমানবাহিনীর একটি হ্যালিকপ্টারে তিনি অবতরণ করেন। সেখান থেকে তিনি গাড়ীযোগে মুন্সিগঞ্জ থেকে তিন কি.মি. দূরে শ্যামনগরের কুলতলী গ্রামে যেয়ে জলবায়ু অভিঘাতে ক্ষতিগ্রস্থদের সাথে কথা বলেন। পরে সুন্দরবন ভ্রমণ শেষে তিনি শ্যামনগর ত্যাগ করেন।
মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অসীম কুমার মৃধা জানান,রাজকুমারী কুলতলী গ্রামে যেয়ে বেড়িবাঁধের ওপর কিছুক্ষণ হাটেন ও আশ্রয় কেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করেন। পরে কুলতলী গ্রামের মানুষদের সাথে কথা বলেন। গ্রামবাসি তাকে জানিয়েছে,দূর্যোগে ভঙ্গুর বাঁধের জন্য তারা প্রায় প্রতিবছর ঘরবাড়ি হারান।
এছাড়া এলাকায় বেকারত্ব ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে জানিয়ে তারা বলেন,চিংড়ি ঘেরে লোকবল কম লাগে। অপরদিকে মিষ্টি পানির অভাবে কৃষি ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। জলাভূমি খনন করে মিষ্টি পানির ব্যবস্থা করে এলাকায় কৃষি ব্যবস্থা আগের জায়গায় ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন চাষিরা।
কুলতলী গ্রামের পুষ্প রাণী মন্ডল জানান,রাজকুমারীর আগমনে তারা খুবই খুশি। রাজকুমারীর সাথে তাদের কি কথা হয়েছে,জানতে চাইলে তিনি বলেন,কুলতলী খাল খননের ফলে এলাকায় মিষ্টি পানির যোগান বেড়েছে। খালের মিষ্টি পানির বদৌলতে এক ফসলের পরিবর্তে এখন দুটো ফসল হচ্ছে,এসব কথা রাজকুমারীকে বলা হয়েছে।
রাজকুমারী ম্যারি এলিজাবেথ ডোনাল্ডসন ঘুরে দেখেছেন কুলতলী এলাকার বেড়িবাঁধ ও আশ্রয়কেন্দ্র। ঝড়-সাইক্লোন-জলোচ্ছাসের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির টিম লিডার জগদীশ চন্দ্র মন্ডল।
তিনি জানান,আমি রাজকুমারীকে দূর্যোগকালীন সময়ে মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছি। বাড়ি-ঘর ছেড়ে মানুষেরা আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে চায়না। কিন্তু যখন দূর্যোগের মুখে পড়ে অসহায় হয়ে পড়ে,তখনই তারা ছাগল-গরু নিয়ে ঝড়ের মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে আসে। এলাকায় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও আরও আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের দাবি জানানো হয়েছে বলে জানান টিম লিডার জগদীশ চন্দ্র মন্ডল ।
দুপুরে মুন্সিগঞ্জের বরষা রিসোর্টে মধ্যাহৃ ভোজ সেরে রাজকুমারী সুন্দরবন ভ্রমণে কলাগাছী এলাকায় যান। সুন্দরবনের মধ্যে পর্যটন এই স্পটে রাজকুমারীকে স্বাগত জানান খুলনা বিভাগীয় বন সংরক্ষক ড. আবু নাসের মোহসীন হোসেন।
এবিষয়ে সুন্দরবন,সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারি বন সংরক্ষক এম এ হাসান বলেন, বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন সম্পর্কে রাজকুমারীকে বিশদ ধারণা দেওয়া হয়েছে।
সুন্দরবন ভ্রমন শেষে বিকেল ৫টার দিকে রাজকুমারী হ্যালিকপ্টারযোগে ঢাকায় ফিরে যান।
পররাস্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ও জেলা প্রশাসনের সার্বিক তত্বাবধানে ডেনমার্কের রাজকুমারী ম্যারি এলিজাবেথ ডোনাল্ডসনের সফর সম্পন্ন হয়েছে। তার নিরাপত্তায় ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করে এসএসএফ ও স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন। তার নিরাপত্তাকে নির্বিঘ্ন করতে সাংবাদিকসহ সাধারণের প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত করা হয়েছিল।