‘দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়া ছুটছে তো ছুটছেই। লাগাম পরানো যাচ্ছে না। এর পদতলে প্রতিনিয়তই পিষ্ট হচ্ছে জনজীবন। ব্যয় বাড়ার কারণে অন্যান্য চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। যেটা ধরি সেটারই দাম আকাশছোঁয়া। অথচ পণ্যের কোনো ঘাটতি নেই। থরে থরে সাজানো সব পণ্য। কিনতে গেলে নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে।’
সখেদে কথাগুলো বললেন রাজধানীর মগবাজারের আবদুল কুদ্দুছ। আর বাড্ডার সালমা বেগম আক্ষেপ করে বলেন, ‘আজ আমাদের মতো মধ্যবিত্তরা পড়েছি মহাবিপাকে, যারা কারো কাছে যেতে পারি না, অভাবের কথা বলতে পারি না। তার ওপর আবার রয়েছে করোনার ভয়।
অনেক পরিবারে বাবা-মা ও ছেলেমেয়েসহ কমপক্ষে ছয়-সাতটি পেট, তাহলে সারা দিনে দাঁড়ায় ১৮ থেকে ২১টি প্লেট। চালের টাকা জোগাড় করতেই তো জান শেষ! তার ওপর কাঁচাবাজারে তো এখন ঢোকাই যায় না।’ মধ্যবিত্ত ঘরের এই দুজনের কথায়ই স্পষ্ট কিভাবে কাটছে সাধারণ মানুষের দিন। আর নিম্নবিত্তের অবস্থা তো আরো করুণ।
কাঁচাবাজার পরিস্থিতি: কিছু কিছু সবজির দাম গত সপ্তাহের চেয়ে কিছুটা কমলেও, প্রায় সব ধরনের সবজির দামই বাড়তির দিকে। কার্যকর হয়নি আলুর বেঁধে দেয়া দাম। কমেনি পেয়াজের ঝাঁজও। ফলে সপ্তাহের বাজার করতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠছে মানুষের। রাজধানীর বাজার ঘুরে দেখা যায় সব সবজির দামই স্বাভাবিকের তুলনায় কেজিপ্রতি ২০-৩০ টাকা বেশি। পেঁপে, করলা, বরবটি, ঢেঁড়শের মতো সবজিগুলো বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ১১০ টাকা কেজি দরে।
শীতকালীন সবজি এখনো বাজারে আসেনি। তাই গুনতে হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত দাম। সরকার নির্ধারণ করে দেয়ার পরও আলু গতকাল শুক্রবার বিক্রি হয়েছে ৫০-৫৫ টাকা কেজি দরে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আড়তে দাম না কমার কারণে তাদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে এবং বিক্রিও করতে হচ্ছে বেশিতে।
বেড়ে যাওয়ায় স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতেই হিমশিম খাচ্ছেন দরিদ্র ও সীমিত আয়ের মানুষ। কারো কারো জন্য পরিস্থিতি এতটাই করুণ যে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ন্যূনতম চাল, আলু, ভোজ্যতেল, কাঁচামরিচ, পেঁয়াজও যেন আজ বিলাসবহুল পণ্যের কাতারে।
এই পাঁচটি মূল নিত্যপণ্যের দাম গত দুই মাসে কেজিপ্রতি পাঁচ থেকে ১১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। মোটা চালের দাম কেজিপ্রতি তিন থেকে পাঁচ টাকা বেড়েছে। বেড়েছে ভোজ্যতেলের দামও। সয়াবিন তেলের পাঁচ লিটার বোতলের দাম ছিল ৪৯৫ থেকে ৫০৫ টাকার মধ্যে। এখন বিভিন্ন বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ৫১৫ থেকে ৫৩০ টাকায়।